সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মার্কিন পতাকা নামিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উড়লো ফিলিস্তিনি পতাকা! বিএনপি সাংগঠনিকভাবে আরও দুর্বল হচ্ছে: ওবায়দুল কাদের বিষয়টি আদালতেই সুরাহার চেষ্টা করব, হাইকোর্টের নির্দেশনা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী গাজার ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করতে সৌদিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায় দেশ থেকে আইনের শাসন উধাও হয়ে গেছে : মির্জা ফখরুল স্বর্ণের দাম ভরিতে কমলো ১১৫৫ টাকা তীব্র তাপপ্রবাহ : স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখতে নির্দেশ হাইকোর্টের মঙ্গলবারও ঢাকাসহ ২৭ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে বিশ্ব শেয়ার মনিবরা

প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে বিশ্ব শেয়ার মনিবরা

খন্দকার হাসনাত করিম :

চীন কেন্দ্রীয় পর্যায়ে স্টক এক্সচেঞ্জ কার্যক্রম শুরু করেছে। ইতিহাসে নব পর্যায়ে এই প্রথম চীনে শেয়ারবাজার উন্মুক্ত হলো। সাংহাইতে প্রথম স্টক এক্সচেঞ্জ কার্যক্রম শুরু হয় ১৮৯১ সালে। তবে এবার চীনা শেয়ারবাজারের কেন্দ্রস্থল রাজধানী বেইজিং। যুগপৎ সাংহাই ও দক্ষিণের শেনঝেনে দু’টি শেয়ারবাজার পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছিল। শেয়ারবাজার খোলার ঘোষণা দিয়ে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বক্তব্য সম্প্রচারের পরপরই চীনের ‘সিকিউরিটি রেগুলেটরি কমিশন (CSRC) আনুষ্ঠানিকভাবে চীনে স্টক মার্কেট চালু করার বিস্তারিত ঘোষণা ও কার্যক্রমের দিক নির্দেশনা চীন ও বিশ্ববাসীকে অবগত করে। ঘোষণার উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম ছিল ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারবারের অংশগ্রহণের প্রাধান্য। বলাবাহুল্য, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়াল স্ট্রিট’ নিয়ন্ত্রণকারী ফেডারেল সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন’ এই যুগান্তকারী চীনা উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এখন থেকে তারা চীনা কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিধি মোতাবেক বেচাকেনা করতে পারবে। চীনা কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে মার্কিন স্টক এক্সচেঞ্জগুলোয় নাম তুলেছে। চীনা কোম্পানিগুলোর নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে ঘাম ছুটে গেছে NASDAQ,, নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ (ঘণঝঈ) ও ঘণঝঈ আমেরিকান- এ তিনটি প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জের। এ বছরের মে মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত চীনা কোম্পানির সংখ্যা ছিল ২৪৮, মোট মূলধনের পরিমাণ ছিল ২.১ ট্রিলিয়ন ডলার। সাংহাই ও শেনঝেনের পর ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের শেয়ারবাজারে তোলার যে ফোরাম কার্যকর আছে চীনে তাকে বলে থার্ড বোর্ড (ঞযরৎফ ইড়ধৎফ)। তবে বেইজিংয়ের নব ঘোষিত আন্তর্জাতিক স্টক এক্সচেঞ্জে দেশী-বিদেশী দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনাবেচা শুরু করলেও চীন সরকারের মতে, সেটি প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক না হয়ে পরিপূরক (ঈড়সঢ়ষবসবহঃধৎু) ধরনের হবে।

চীনের কেন্দ্রীয় ‘স্টক মার্কেট’ পর্যালোচনায় মশগুল হয়ে পড়েছে চীনের নিজস্ব রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও বাজার পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো এবং একই সাথে আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজার পর্যবেক্ষক কোম্পানিগুলোর এক বিশাল বহর। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো চীনের শেয়ারবাজারের ভবিষ্যৎ পর্যবেক্ষণে এরই মধ্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, সর্বাধিক দ্রæত বিকাশমান চীনা অর্থনীতির গতি অবিশ্বাস্য বৃদ্ধিতে চীনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সংস্কারমূলক এ ব্যবস্থা সত্যিই পৃথিবীকে চমকে দেবে। তারা এই আশাবাদের ভিত্তিফলক হিসেবে ধরছেন সাংহাই ও শেনঝেন স্টক মার্কেটের গত কয়েক বছরের অগ্রগতির ধারাকে।

সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের ৯৫৩টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ছিল ৯৯৭টি তালিকাভুক্ত শেয়ার; আর শেনঝেনের এক হাজার ৫৩৬টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির ছিল এক হাজার৫৭৭টি তালিকাভুক্ত শেয়ার। ২০১৩ সাল থেকে মাত্র এই কয়েক বছরে যার স্ফীতির পরিমাণ ছিল ২২৮ গুণ এবং মোট ‘ট্রেডিং ভলিউম’ বেড়েছে ১,৩১১ গুণ। বিশ্ববাজারে চীনের শেয়ারবাজার উন্মুক্ত করে দিলে এই বৃদ্ধি যে কী রূপ পাবে, তা ভেবে বেদিশা হয়ে যাচ্ছেন বিশ্ব শেয়ারবাজার নিরূপণকারী এবং ‘রেটিং’ নির্ধারণকারী সংস্থাগুলো। পর্যবেক্ষকরা জোর দিচ্ছেন স্টক মার্কেটের ‘সিকিউরিটাইজেশন’-এর ধারা, ‘ট্রেডিং’-এর ভলিউম ও ‘টার্নওভার রেট।’ সব সূচকেই চীনের উত্থান বিশ্বাসের ‘চীনা প্রাচীরকে’ টপকে গেছে। আর সব দেশের শেয়ারবাজারের মতো চীনের বাজারও ইস্যু মার্কেট (বা প্রাইমারি মার্কেট) এবং ‘ট্রেডিং’ মার্কেটে (বা সেকেন্ডারি মার্কেট) বিভক্ত।

চীনা শেয়ারবাজারের নব উত্থানের পেছনে সাংহাই ও শেনঝেনের অভিজ্ঞতার সাথে যুক্ত রয়েছে আর একটি বিশাল ফ্যাক্টর এবং সেটি হলো হংকং শেয়ারবাজার, যার ধার ও ভার উভয়ই বিশ্বের চালু শেয়ারবাজারকে প্রভাবিত করে চলেছে গত এক শ’ বছরেরও বেশি।

এ তিনটি বাজারসমেত একীভ‚ত চীনা শেয়ারবাজারটি সূচনাতেই হবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ বাজার, যা বিশ্ব শেয়ারবাজারে প্রথমেই জোগাবে ৮৫৫ বিলিয়ন ডলারের নতুন শেয়ারের এক বিরাট ‘পুশ।’ তবে ঘণঝঊ এরই মধ্যে সবচেয়ে লিস্টিং থেকে প্রধান পাঁচটি চীনা টেলকো-জায়ান্ট যেমন ডবরনড় (ডই), ংড়যড়, ঘরড়, খর অঁঃড় কিংবা আলীবাবা)-কে বাদ দেয়া বিশ্বের মুক্তবাজার অর্থনৈতিক দর্শনের সাথে নিতান্তই সাংঘর্ষিক। এ পাঁচটি বড় চীনা কোম্পানি ছাড়াও রয়েছে ঔউ.পড়স, চরহফঁড়ফঁড়, ঞবহপবহঃ, ঠরংযড়ঢ়, ইওচট, ঘবঃপধৎব (ঘঞঊঝ), ঞৎরঢ়.পড়স, ঢ-ঢ়বৎম, ঔড়ু, ইরষরনরষর কিংবা বিশ্বের নামজাদা অন-শোর, অফ-শোর বিনিয়োগকারীদের লোভাতুর দৃষ্টি এখন চীনের শেয়ারবাজারের দিকে। গোটা চীনের শেয়ারযোগ্য মূলধন ও পরিসম্পদের মাত্র ৬ শতাংশ বিনিয়োগেই শেয়ার বিশ্বের এখন চক্ষু চড়কগাছ। যেহারে চীনের অভ্যন্তরীণ সম্পদ তথা বিনিয়োগযোগ্য মূলধন বাড়ছে, তার বিনিয়োগ সম্ভাবনা হিসাব করলে অচিরেই একীভ‚ত চীনা শেয়ারবাজার ঘণঝঊ, ঘঅঝউঅছ, ঞঝঊ, ঊঁৎড়হবঃ, ঐকঝঊ, খঝঊ’র সব যোগফলকেও অতিক্রম করবে।

এরই মধ্যে ঈযরহধ গড়নরষব (ঈঐখ)-এর গ্রাহকসংখ্যা ৯৫ কোটির মতো। ‘ফাইভ-জি’তে সুইচ করা মাত্রই নতুন আড়াই লাখ গ্রাহক জুটবে এই চীনা প্রতিষ্ঠানের। ঈযরহধ খরভব ওহংঁৎধহপব (খঋঈ)-এর ২০২০ সালে উন্নীত মুনাফা ছিল ৩৪ শতাংশ। ঘবঃঊধংব (ঘঞঊঝ) অনলাইন গেমিং ব্যবসা এখন রমরমা। কেবল ব্যাংক অব আমেরিকাই ঘঞঊঝ-এর শেয়ার কিনেছে প্রতিটি ৪৭৮ ডলার দরে। ঈঘঙঙঈ (ঈঊঙ) চীনের খনিজ তেল আহরণকারী কোম্পানি, যার শেয়ারও ব্যাংক অব আমেরিকা কিনেছে ১৩১,৪৮ ডলার দরে। চীনা সার্চ ইঞ্জিন কোম্পানি ইধরফঁ (ইওউট)-এর শেয়ার ১৮৬ ডলার। কিনেছে খোদ ব্যাংক অব আমেরিকা।

এসব কোম্পানি যে একীভ‚ত চীনা শেয়ারবাজারে আরো বেশি উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ঢুকবে, এতে সন্দেহের কোনো অবকাশই নেই। তা হলে ধরেই নেয়া যায় চীনা শেয়ারবাজারের গতি প্রকৃতি কী হবে! আমেরিকানরা যাকে ইঁষষ গধৎশবঃ বলছে, চীনাদের শেয়ারকে তখন জগতের সবাই ডাকবে ইঁষষ-উড়ুবৎ মার্কেট নামে।

চীনের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে চীনের এই নতুন ‘ওয়াল স্ট্রিট’ অর্থাৎ বেইজিং ‘অফ-শোর’ শেয়ারবাজার এক অতি তাৎপর্যমণ্ডিত মাইলফলক হয়ে থাকবে। তা ছাড়া চীনের দীর্ঘমেয়াদি এবং টেকসই নীতি-সংস্কারের পথেও এই উন্মোচিত দ্বার এক নতুন বিশ্ব বাতায়নের কাজ করবে। চীনা কোম্পানিগুলোর একটি বড় সমস্যা হলো তাদের ‘ব্র্যান্ডিং’ অবস্থান অর্থনৈতিক সামর্থ্যরে চেয়ে অত্যন্ত অসঙ্গতিপূর্ণ; যে কারণে বিশ্বের বড় বড় শেয়ারবাজারে সেগুলোর লিস্টিং (তালিকাভুক্তির) হার খুবই কম। তা ছাড়া যেসব খাতে ব্র্যান্ডিংয়ের চেয়ে ব্যবসায়িক সামর্থ্য ও শক্তি প্রধান বিবেচ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান শেয়ার মাহফিলে তারা এখনো অনাদৃত। ঘণঝঊ চীনা টেলকো কোম্পানিগুলোকে একে একে বাদ দিচ্ছে। জাপান বা কোরিয়ার মতো চীনকেও এখন পণ্যের নিজস্ব ‘ব্র্যান্ড’ গড়ে তুলতে হবে। তবে শেষ কথা হলো প্রতিযোগিতার প্রধান নিয়ামক যে অর্থনৈতিক বা আর্থিক সামর্থ্য, অন্যরা খুব সহজে তাদের দর ঘোষণার খোলা প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দিতে পারবে না- অন্তত তাদের নিজস্ব কেন্দ্রীয় শেয়ারবাজার থেকে।

খোলা শেয়ারবাজারের অবাধ প্রতিযোগিতা থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে চীনের ক্ষুদ্র ও মধ্যম উদ্যোক্তারা। তাদের সম্মিলিত শক্তির কথা ভেবে বিশ্ব শেয়ার মনিবরা প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে। কাঁপন ছুটে গেছে নিউ ইয়র্ক স্টক, নাসডাক, ডাও জোনস বা এফটিএসসির। যেসব চীনা কোম্পানি সাংহাই ও হংকং শেয়ারবাজারে দ্বৈত-তালিকাভুক্তির (উঁধষ খরংঃরহম) সুবিধা এরই মধ্যে পেয়েছে, তাদের তরক্কি দেখে বিশ্ব শেয়ার মনিবরা এখন থেকেই বেদিশা হতে শুরু করেছে। সামনের দিনগুলোয় চীনা শেয়ারবাজার প্রতিযোগীদের কিভাবে শান্তিপূর্ণ বাণিজ্যের পথে ঘায়েল করে গোটা বিশ্বের নজর এখন সে দিকেই।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877